আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ধারণা ও গুরুত্ব (পাঠ ১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা | - | NCTB BOOK
155
155

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ধারণা

বিশ্বের প্রত্যেক রাষ্ট্রই তাদের নিজেদের কল্যাণে বা স্বার্থে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে। বৈদেশিক নীতির মূলে রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মাধ্যমে নিজ দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সাতটি মহাদেশে ছড়িয়ে আছে। দেশগুলো স্বাধীন ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলেও অনেক দেশই সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল নয়। এছাড়া দেশগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এ সমস্যাগুলো দূর করতে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় অন্য দেশ ও সংস্থার সহযোগিতা। যেমন- আমাদের বাংলাদেশে জ্বালানি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের সরকারের পক্ষে এককভাবে এ সমস্যাগুলো পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব নয়। ফলে এ সমস্যাগুলো দূরীকরণে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশ বা সংস্থার সহযোগিতা নিতে হয়। আবার মধ্যপ্রাচ্যসহ আফ্রিকার অনেক দেশে রয়েছে জাতিগত সংঘাত, যুদ্ধ ও অস্থিরতা। ফলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মাধ্যমে সেখানে শান্তি রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এভাবেই বিশ্বের দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সুন্দরভাবে টিকে আছে।

উপরের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে বিশ্বের দেশগুলো স্বাধীন হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা ও বন্ধুত্বের মনোভাব। কেবল একই অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেই নয়, বিশ্বের দূরদূরান্তে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যেও এ ধরনের সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে। সহযোগিতার এ গুরুত্ব থেকে তাই পৃথিবীতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা, যেমন-জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথ ইত্যাদি। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন দেশকে সহযোগিতা দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব : বর্তমান যুগ পরস্পর নির্ভরশীলতার যুগ। আর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এ যুগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা গড়ে উঠেছে। একটি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি, পরিবেশ, আবহাওয়া, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় একটি দেশ সরাসরি বা দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে অন্য দেশকে সাহায্য করে। আবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমেও সহযোগিতা করে থাকে। মূলত নিজস্ব প্রচেষ্টার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বের দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে। আবার এমন অনেক সমস্যা আছে যেগুলোর সাথে এক বা একাধিক দেশের স্বার্থ জড়িত। ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় না। এ জন্য বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

নিচে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো। এগুলো পাঠের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।

উদাহরণ-১: বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে নিরক্ষর জনসংখ্যা অনেক। শিক্ষা হচ্ছে যে কোনো দেশের সব ধরনের উন্নয়নের চাবিকাঠি। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে দেশগুলোর নিজেদের পক্ষে দেশের সকলকে শিক্ষিত করা সম্ভব নয়। ফলে ইউনিসেফ, ইউনেস্কোসহ বিশ্বের আরও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এসব দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সাহায্য দিচ্ছে। জাতিসংঘ 'সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা'র আলোকে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশগুলোকে নিরক্ষরতামুক্ত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল।
এ লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছিল। 'সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা' ২০১৫ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা'র যাত্রা ২০১৬ হতে শুরু হয়।
উক্ত লক্ষ্য মাত্রায় শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নে জাতিসংঘের অঙ্গীকার রয়েছে।

উদাহরণটি থেকে সহজেই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অনেক বড়ো বড়ো সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কাজ: আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বের উপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন লিখ।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion